কিশোরগঞ্জের আব্দুল কাহার আকন্দ কোথায়? কেউ জানে না!
২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পিএম | আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পিএম
শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন প্রলম্বিত করার পেছনে যে বেশকিছু মানুষ নেপথ্যে ভূমিকা পালন করেছেন। আব্দুল কাহার আকন্দ তার মধ্যে একজন। শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত জিঘাংসা বাস্তবায়নের প্রধানতম হাতিয়ার ছিলেন এই আব্দুল কাহার আকন্দ।
আওয়ামী লীগ ও ভারতের স্বার্থ রক্ষায় আব্দুল কাহার আকন্দ ছিলেন নিয়োজিত ও নিবেদিত। তিনি কাজ করতেন সিআইডিতে। ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, তখন তাদের মূল এজেন্ডা ছিল শেখ মুজিব হত্যার বিচার করা। এই বিচারের জন্য তদন্ত করার দায়িত্ব পান এই আকন্দ। মুজিববাদ নিয়ে এখন যত আলোচনা চলছে, তা প্রতিষ্ঠায় এই মামলায় ও বিচারের ভূমিকা ছিল সর্বোচ্চ। আর এই মামলার মূল কারিগর ছিলেন আব্দুল কাহার আকন্দ। তিনি খায়রুজ্জামান, কে এম ওবায়দুর রহমান , শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন , সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান , সৈয়দ ফারুক রহমান ও তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে আটক করেন।
২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসলে আব্দুল কাহার আকন্দকে বরখাস্ত করা হয়। তিনি ছিলেন শেখ হাসিনার সবচেয়ে কাছের লোক হওয়ায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের পর হাসিনা যখন ফের ক্ষমতায় আসেন, তখন দায়িত্ব নিয়েই ২০০৯ সালের ২৮ জানুয়ারি তাকে সিআইডিতে নিয়োগ দেন। আব্দুল কাহার আকন্দর চাকুরির বয়স অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই জয়েন করার একদিন পর ২৯ জানুয়ারি তিনি অবসরে যান।
২০১১ সালের ৩রা জুলাই আসামির তালিকায় আরও ৩০ জনকে যোগ করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন কাহার আকন্দ। সম্পূরক অভিযোগপত্রে তারেক রহমানসহ চারদলীয় জোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও বিএনপি-জামায়াত নেতাদের নাম ঢুকিয়ে দেন কাহার আকন্দ।
অনুসন্ধান এবং কাহার আকন্দের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, কাহার আকন্দের ফর্মুলা ছিল তদন্তে শেখ হাসিনার আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটানো। শেখ হাসিনার মিশন বাস্তবায়ন করাই ছিল তার কাজ। এর মাধ্যমে তিনি শেখ হাসিনার আনুকুল্য পাওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক ফ্লাট-প্লট ও বাড়ি করা ছাড়াও কানাডাতেও তিনি একাধিক বাড়ি করেছেন। এ ছাড়া গড়েছেন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। একটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-এর জামানায় খিলগাঁওয়ের তালতলার কাহার আকন্দ একটি বহুতল ভবন করেছেন। আওয়ামী লীগের বিগত ১৫ বছরের শাসনামলে তিনি রাজধানীর বসুন্ধরাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় একাধিক ফ্লাট-প্লট ও বাড়ি করেছেন। এক সময় তিনি তালতলা’র বাসায় থাকলেও সর্বশেষ তিনি বসুন্ধরা এলাকার ফ্লাটে থাকতেন। দেশ ও দেশের বাইরে মিলিয়ে অন্তত হাজার কোটি টাকার মালিক বনেছেন কাহার আকন্দ। এ ছাড়া তার ভাই স্থানীয় সহশ্রাম ধূলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম আকন্দের নামেও বিপুল পরিমাণ সহায়-সম্পদ করেছেন।
আব্দুল কাহার আকন্দ অসংখ্য মানুষের বুকে, হৃদয়ে রক্তক্ষরণের কারণ। নিরীহ অসংখ্য মানুষকে তিনি ফাঁসিয়ে গেছেন।
শেখ মুজিব হত্যা মামলার পর দ্বিতীয় যে স্পর্শকাতর মামলায় তাকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় তা ছিল মনজুর হত্যা মামলা। এই মামলার মধ্য দিয়েও আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করেছে আর তাতে সহায়তা করেছেন আব্দুল কাহার আকন্দ।
এরপর হাসিনার এজেন্ডা তিনি বাস্তবায়ন করেছিলেন একুশে আগষ্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে। আকন্দ ২০০৪ সালের ঢাকা গ্রেনেড হামলার তদন্ত কর্মকর্তাও ছিলেন আব্দুল কাহার আকন্দ । তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর সাক্ষ্য দেন যে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাড়ি থেকে গ্রেনেড সরবরাহ করা হয়েছিল। মুফতি আব্দুল হান্নানকে দিয়ে জোরপূর্বক সাক্ষ্য নেয়ার কৃতিত্ব ছিল তার। এই মামলায় সম্পুরক চার্জশিট দেয়ার নামে নিরীহ মানুষকে তিনি ফাঁসিয়ে যান। সম্প্রতি এই মামলায় অভিযুক্তদের অনেকেই বেকসুর খালাস পেয়েছেন। কিন্তু তাদেরকে যিনি ফাঁসিয়ে গেলেন সেই আব্দুল কাহার আকন্দকে শাস্তি দেওয়ার কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা যায়নি।
আব্দুল কাহার আকন্দকে এরপর যে মামলার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় হেইজমনি বাস্তবায়ন করা হয় তা ছিল বিডিআর বিদ্রোহ তদন্ত মামলা। আব্দুল কাহার আকন্দ বিডিআর বিদ্রোহের তদন্তের জন্য অপরাধ তদন্ত বিভাগের ২৫০ জনের একটি দলের নেতৃত্ব দেন। তিনি গণহারে বিডিআর সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ চাপিয়ে দেন কিন্তু ভারত ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি এড়িয়ে যান। তার এই অসদাচরণ এতটাই স্পষ্ট ছিল যে, খোদ আওয়ামী লীগ আমলেই ২০১৪ সালের ৪ ফেব্রæয়ারি ঢাকার একটি আদালত আকন্দের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। কারণ আদালত তাদের পর্যবেক্ষণে প্রমাণ পেয়েছিল যে, আব্দুল কাহার আকন্দ পুলিশ হলেও কার্যত একজন আওয়ামী রাজনীতিবিদ এবং বিদ্রোহের মামলার অভিযুক্ত তোরাব আলীর পক্ষে তিনি পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন। শুধু তাই নয়, মানবাধিকার সংস্থাগুলির দ্বারা অভিযোগ করা হয়েছিল যে বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় সৈন্যদের অপরাধ তদন্ত করার নামে তিনি বিডিআর সদস্যদের হেফাজতে নিয়ে তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছিল।
বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের ইতিহাস একমাত্র “আব্দুল কাহার আকন্দ” যিনি অবসরের পরেও ১০ বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে চাকুরী কওে গেছেন, যা সর্বশেষ ২০১৯ সালের ফেব্রæয়ারিতে শেষ হলে তিনি চূড়ান্ত অবসরে যান।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের খুবই আস্থা-ভাজন ও বিশ্বস্ত হওয়ায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনীত চমকপ্রদ প্রার্থী ছিলেন আব্দুল কাহার আকন্দ। তার হাতে নৌকার টিকেট তুলে দিয়ে কিশোরগঞ্জ-২(কটিয়াদি-পাকুন্দিয়া) আসনে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল আওয়ামী। যদিও নির্বাচনে জিততে পারেননি তিনি।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের চার মাস পরও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য অবৈধভাবে দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। পালাতে গিয়ে সীমান্তে ধরাও পড়েছেন কেউ কেউ। সীমান্ত পার হতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এ পর্যন্ত আব্দুল কাহার আকন্দ কোথায় আছে কেউ জানে না।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রেমিট্যান্সে সুবাতাস ডিসেম্বরের ২১ দিনেই এলো ২০০ কোটি ডলার
প্রশাসন ক্যাডারের ‘ইয়াং অফিসার্স’ ফোরামের সভাপতি শুভ, সাধারণ সম্পাদক জয়
“ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও কেওক্রাডং বাংলাদেশ এর উদ্যোগে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে হলো ‘কোস্টাল ক্লিনআপ’”
তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী রাহাত ফাতেহ আলী খানের সৌজন্য সাক্ষাৎ
রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ছাত্র জনতার বিজয়কে নস্যাৎ হতে দেয়া যাবে না
বিপিএল মিউজিক ফেস্ট: যান চলাচলে যে নির্দেশনা ডিএমপির
গাজীপুরের শ্রীপুরে মেঘনা গ্রুপের একটি বাটন তৈরির কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
সোনারগাঁওয়ে ছেলের ছুরিকাঘাতে বাবা নিহত
আনজার গ্রুপের আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠকদের সংবর্ধনা
মির্জাপুরে রাস্তায় বাঁশের বেড়া দেয়ায় জনদুর্ভোগ এলাকাবাসির মানববন্ধন
মেধা বৃত্তির ফলাফল ঘোষণা করলো উষা
পাহাড় কাটা, বায়ুদূষণ ও নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান জোরদার করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
ফুলপুরে অবৈধ ইট ভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, এক লাখ টাকা জরিমানা
মিরপুরে বেড়েছে চুরি ছিনতাই
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন
পালিয়ে গিয়ে হাসিনা ভারত থেকে ষড়যন্ত্র করছে: মির্জা ফখরুল
মাগুরায় দলকে গতিশীল করতে কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
মৌলভীবাজারে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে শ্রমিকের মৃত্যু, জিরো লাইন থেকে লাশ উদ্ধার
মাদারীপুরে ভুয়া সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র জনতা
সেনবাগে ট্রাক্টর চাপায় ১ শিশু মৃত্যু : আহত ১